Alexa Seleno
@alexaseleno

  রহস্যে মোড়া পদ্মনাভস্বামী মন্দির 

  ভূমিকা

               একটা বিশ্ব বিখ্যাত মন্দির, বিত্তশালী হিসেবে শুধুমাত্র ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতে এই মন্দির প্রথম স্থান অধিকার করে রয়েছে। মন্দিরের তালা চাবি ছাড়া একটা অদ্ভুত দর্শন দরজা আর সেই দরজার পেছনে রহস্য ভেদ করার জন্য মানুষের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। এই ফোর জি ফাইভ জি এর যুগেও সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরের পাঁচটি দরজা ভেঙে বিপুল ধন সম্পত্তি উদ্ধার করা গেলেও ৬ নম্বর দরজা ভাঙার আগে থেমে যেতে হয়। আর সেই ৬ নম্বর দরজার পেছনের রহস্য আজও মানুষের কাছে অধরা রয়ে গেছে। কিই বা এমন ঘটল যে একটা মন্দিরের ধনসম্পত্তি উদ্ধারের কাজে সুপ্রিম কোর্ট কে হস্তক্ষেপ করতে হলো। আর সেই দরজা ভাঙার উদ্যোগের এক মাসের মধ্যেই টি পি সুন্দর রাজন, সেই বিচারপতি যিনি এই মন্দিরের দরজা ভাঙার আদেশ দিয়েছিলেন তার মৃত্যু এই মন্দিরের রহস্যকে আরো  ঘনীভূত করে তোলে।

                    কোথায় অবস্থিত পদ্মনাভস্বামী মন্দির?     

           আমাদের দেশে রয়েছে প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর সব মন্দির। এর মধ্যে কিছু মন্দিরের রহস্য তো সাধারণ বুদ্ধি, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার থেকে অনেক দূরে। আর কিছু মন্দির নিয়ে যদিও বা রিসার্চ হয়েছে তো সেগুলোর রহস্য সবার মাথা ঘুরিয়ে রেখে দিয়েছে। এরকমই একটি মন্দির হল দক্ষিণ ভারতের কেরালার রাজধানী তিরুবন্তপুরমে অবস্থিত পদ্মনাভস্বামী মন্দির। কেরালা দক্ষিণ ভারতের এমন একটি রাজ্য যার একদিকে সুবিশাল সমুদ্রের তট, অন্যদিকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা, সে কারণে এই রাজ্যটি সব সময় পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল হয়ে রয়েছে। তার ওপর বিশ্ব বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পদ্মনাভস্বামী মন্দির যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এবং রহস্যময় মন্দির বলে মনে করা হয়, এটি এখানে অবস্থিত হওয়ার জন্য তিরুবন্তপুরম পুরো পৃথিবীর পর্যটকদেরকে আকর্ষিত করে। অনুমান করা হয় যে পুরো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বিত্তশালী মন্দির হল এটি। এই মন্দিরে এমন কিছু রহস্য রয়েছে যা অনেক চেষ্টা করেও ভেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

              পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে কোন দেবতার বাস?

                এটি একটি হিন্দু মন্দির। মালায়ালাম ভাষায় তিরুবন্তপুরম শব্দটির অর্থ হলো ভগবান অনন্তের শহর। এখানে ভগবান অনন্ত বলতে পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের শেষ নাগ অনন্ত কে বোঝানো হয়েছে। বলা হয় এই মন্দির ৭০০ বছরের পুরনো। বিষ্ণু ভক্তদের জন্য এই মন্দির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরাধনা স্থল। বলা হয় যে সবচেয়ে প্রথমে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি এই স্থানে পাওয়া যায়, তারপর মন্দিরে নির্মাণ করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে  ভগবান বিষ্ণুর অনন্ত শয্যার বিশাল প্রতিমা রয়েছে যেটা শেষ নাগের উপর শয়ন মুদ্রাতে বা বিশ্রামরত মুদ্রাতে বিরাজমান। এখানকার বিষ্ণু ভগবানের মূর্তিও বেশ অন্যরকম। ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও মহেশ্বর, এই তিন ভগবানের দর্শন মেলে এই মূর্তিতে। মন্দিরের ভেতরে ১৮ ফিট বিষ্ণু ভগবান অনন্ত নাগ বা শেষ নাগের উপর শায়িত রয়েছেন। শেষ নাগের মুখ এমন ভাবে খোলা যেন ভগবান বিষ্ণুর হাতের পদ্ম ফুলের সুগন্ধ নিচ্ছে। মূর্তির আশেপাশে ভগবান বিষ্ণুর দুজন রানী শ্রীদেবী ও ভূদেবীর মূর্তি স্থাপিত। এই মূর্তিতে ভগবান বিষ্ণুর নাভি থেকে বেরোনো পদ্মফুলে জগৎ পিতা ব্রহ্মার মূর্তি স্থাপিত। ওনার ডান হাত একটা  শিবলিঙ্গ কে ছুঁয়ে রয়েছে আর ওখানেই ওনার নাভি থেকে পদ্মফুল বেরিয়েছে, তার ওপর ভগবান ব্রহ্মা বসে রয়েছেন। বিষ্ণু ভগবানের এই বিশেষ মুদ্রার জন্য এই মন্দিরের নাম পদ্মনাভস্বামী মন্দির। বিশালাকার বিষ্ণু প্রতিমাকে খাঁটি সোনার তৈরি ভীষণ ভারী ভারী গয়না দিয়ে সাজানো হয়। সারা বছরই এই মন্দিরে লাখ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে ভগবান বিষ্ণুর দর্শনের জন্য। এই মন্দিরের তিনটি দরজা মন্দিরের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রথম দরজা দিয়ে শেষ নাগ, ভগবান বিষ্ণু আর শিবলিঙ্গ দেখা যায়। দ্বিতীয় দরজা দিয়ে পদ্মফুলের ওপর বসে থাকা ভগবান ব্রহ্মা আর তৃতীয় দরজা দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর পদযুগল দেখা যায়।

            পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের নিয়ম কানুন গুলো কি?

               শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাই এই মন্দিরে প্রবেশাধিকার পায়। মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য পুরুষদের সাদা ধুতি আর মহিলাদের জন্য শাড়ি পরার বিধান রয়েছে। কেরালার মানুষ বছরে দুবার এই মন্দির কে ঘিরে উৎসবে মাতে, মার্চ-এপ্রিলে একবার আর অক্টোবর-নভেম্বরে দ্বিতীয়বার।

            পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের গঠনশৈলী কেমন?      

     পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সাততলা গোপুরোম দেখে বোঝা যায় যে এই মন্দির বিশাল পরিসরে অবস্থিত। মন্দিরটি প্রায় ৩৫ মিটার লম্বা, কেরল আর দ্রবিরিয়ান বাস্তুশিল্পের মেলবন্ধনে নির্মিত এই মন্দির দক্ষিণ ভারতের বাস্তু কলার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়াও মন্দিরের প্রবেশ পথে থাকা একটা সোনার গোপুরম মন্দিরের আকর্ষণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মন্দির শুধু ইতিহাস তৈরি করে না বরং বলা যেতে পারে যে এই মন্দিরটি নিজেই একটি ইতিহাস। বিশাল পরিসরে অবস্থিত এই সাততলার মন্দিরটি, যার পাশে পদ্মতীর্থকুলাম নামে একটি সরোবর রয়েছে। মন্দিরের একদিক সুবিশাল সমুদ্রতটের সৌন্দর্যে ভরা আর অন্যদিকে রয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতের অদ্ভুদ নৈসর্গিক সৌন্দর্য। মন্দিরের ভেতরে গর্ভগৃহে ১৮ ফিট লম্বা বিষ্ণু মূর্তি শেষ নাগের ওপর শায়িত অবস্থায় বিরাজমান। এই ভীষণই বিখ্যাত মন্দির কে সৌন্দর্যের জন্য দক্ষিণ ভারতের অনেক বিখ্যাত সিনেমাতেও দেখানো হয়েছে।

              পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের নির্মাণের ইতিহাস আর সংরক্ষিত গুপ্তধনের কাহিনী।

               এই মন্দিরের নির্মাণ কাহিনী বা গুপ্তধন সংরক্ষণ করার ইতিহাস কোথাও সুস্পষ্টভাবে লেখা নেই। কেউ কেউ মনে করে এই মন্দির ৫ হাজার বছর পুরনো, আবার কেউ কেউ মনে করে এই মন্দিরের ইতিহাস এতটাও পুরনো নয়। এটি ষোড়শ শতাব্দীর মন্দির। যেটুকু জানা যায় যে ১৭৩৩ সালে ত্রিবাঙ্কুরের রাজা মার্তন্ড বর্মা এই মন্দিরের নির্মাণ করেন। ত্রিবাঙ্কুর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার করেন এই  রাজা। উনি ওনার যুদ্ধনীতিতে পাশাপাশি সমস্ত রাজ্যের ওপর অধিকার স্থাপন করে ত্রিবাঙ্কুরকে প্রচণ্ড শক্তিশালী রাজ্যে পরিনত করেন। তাছাড়াও উন্নতমানের মসলা, আয়ুর্বেদিক ওষুধ আর বিশেষভাবে গোলমরিচের ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত করেন তিরুবন্তপুরমকে। কয়েক বছরের মধ্যেই রাজা মাতন্ডবর্মা এই ব্যবসা থেকে বিপুল অর্থ ও ধন সম্পত্তি অধিকারী হন। এই বিপুল সম্পত্তি চুরি বা লুটের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার চিন্তা রাজাকে করতে হয়। ঠিক এরকম একটা সময় ভগবান বিষ্ণু রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন যে পদ্মনাভস্বামী মন্দির নির্মাণ করে বিপুল ধরনের সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখার জন্য। এরপর ১৭৫০ সালে রাজা সিংহাসন ত্যাগ করে আজীবন বিষ্ণু ভগবানের দাস হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন,এবং সমস্ত ধনরাশি পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরের নামে দান করেন। যে স্থানে মন্দিরটি আছে সেখানে ভগবান বিষ্ণুর একটা মূর্তি পাওয়া গেছিল বলে মনে করা হয়। তারপরে ওই স্থানে মন্দির নির্মাণ করা হয়। এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রাজা তার বিপুল ধনরাশি সংরক্ষিত করে রাখেন। 

              কি কারনে পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরের মালিকানা ও সম্পত্তি নিয়ে অশান্তি শুরু হলো?

                 ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত এই মন্দির এবং কেরালা রাজ্যটি সম্পূর্ণরূপে ত্রিবাঙ্কুরের রাজাদের অধিকারের ছিল। স্বাধীন ভারতবর্ষে কেরালা রাজ্যটি ভারত সরকারের অধীনস্থ হলেও পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি ত্রিবাঙ্কুরে রাজাদেরই অধিকারে ছিল। মন্দির এবং মন্দিরের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয় ১৯৯১ সালে। ওই বছরের ২০শে জুলাই শেষ রাজা তিরুনাল বলরাম বর্মার মৃত্যু ঘটে এবং ওনার কোন উত্তরাধিকারী ছিল না। সে কারণে কেরালা সরকার শেষ রাজার ভাই উত্তরাটম তিরুনাল মার্তন্ড বর্মাকে মন্দিরের দেখা শোনা আর প্রশাসনিক সমস্ত কিছুর দায়-দায়িত্ব দিয়ে দেয়। মন্দিরের গর্ভ গৃহে প্রচুর ধনসম্পত্তি সংরক্ষিত আছে এ বিষয়ে শেষ রাজার ভাইও জানতেন। তিনি সেই গুপ্তধন নিজের অধিকারে আনতে চান। এ বিষয়ে জানাজানি হতেই মন্দিরের প্রচুর ভক্ত এর তীব্র বিরোধিতা করে আদালতে যায়। এই পরিস্থিতিতে শেষ রাজার ভাইকেও নিজের পক্ষ রাখার জন্য আদালতে যেতে হয। এই বিষয়ে কেরল হাইকোর্টের রায় শেষ রাজার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আসে। রায়ে বলা হয় শেষ রাজার মৃত্যু ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু জরুরি নয় যে তার ভাইকেই মন্দিরের সম্পত্তির অধিকারী বানাতে হবে। কেরল হাইকোর্ট শেষ রাজার ভাইকে বঞ্চিত করে মন্দিরের সমস্ত দায়-দায়িত্ব একটি ট্রাস্টকে দিয়ে দেয়। এইভাবে মন্দিরের সম্পত্তি নিয়ে রাজা এবং ভক্তদের মধ্যে ভীষণ অশান্তির সৃষ্টি হয়।

               কি কারনে সুপ্রিমকোর্টকে পদ্মনাভোস্বামী মন্দিরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়?

                কেরল হাইকোর্টে শেষ রাজার বিরুদ্ধে যে রায় এসেছিল তার বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যান। এই সময় বিভিন্ন রকম প্রশ্ন উঠতে থাকে মন্দির আর মন্দিরের সম্পত্তিকে ঘিরে। এমন ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে মন্দিরের সমস্ত রকম দায়-দায়িত্ব ট্রাস্টের হাতে চলে গেলে মন্দিরের সম্পত্তির তছরুপ হবার আশঙ্কা থাকে। এই সম্ভাবনার কথাটা একেবারেই উড়িয়ে না দিয়ে, সুপ্রিমকোর্ট নিজের তত্ত্বাবধানে ২০১১ সালে একটি ৭ জনের দল গঠন করে। সিদ্ধান্ত হয় যে এই দলের দায়িত্বে মন্দির এর গর্ভগৃহে সমস্ত দরজা খোলা হবে। টোটাল ৬ টি দরজা ছিল মন্দিরের সেখানে, সেই দরজা গুলোর নামকরণ হলো A B C D E F। এরপর দরজা গুলো খোলার কাজ শুরু হল, B দরজাটি বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত দরজা খোলা সম্ভব হল। কিন্তু B এর দরজাটা কোনভাবেই খোলা সম্ভব হলো না, এই B দরজাটাকেই এখন ৬ নম্বর দরজা বলা হয়। পাঁচটি দরজা থেকে মোট এক লাখ 86 হাজার 30 কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের সোনা রুপোর হিরে ছাড়াও বহু মূল্য ধাতু পাওয়া গেছে। পৌনে দু লাখ কোটি টাকার এই ধন-সম্পত্তি মন্দিরের গর্ভ গৃহ থেকে বাইরে এসেছে সরকারি খাতায় নথিভুক্ত আছে। ২০১১ সালে, প্রায় তিন বছর ধরে, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এই ধনসম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

                মন্দিরের ৬ নম্বর দরজাটি খোলা সম্ভব হয়নি কেন?

                এবার আসা যাক ছ নম্বর দরজা বা দরজা নম্বর B এর কথায়। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে মন্দিরের পাঁচটি দরজা খোলা সম্ভব হলেও এই দরজা নম্বর দিয়ে কোনভাবেই খোলা যায়নি। ৬ নম্বর দরজাটি খোলার জন্য দলটি এগিয়েছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা থেমে যায়। ভাঙার জন্য দরজার সামনে পৌঁছতে ই ওই দলটির একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়, তখন তাদের মনে হয় থেমে যাওয়াই উচিত। এমনিতেও ওই দরজা নিয়ে অনেক কথা ও কাহিনী ছিল যা সবারই জানা। ওই দলটি সুপ্রিম কোর্টের রিপোর্ট দেয় যে ৬ নম্বর দরজাটি খোলা সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালে সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয় যে এই দরজার বিষয়ে পরে ভাবা যাবে।   

              ২০১৯ সালে তেরই জুলাই সুপ্রিম কোর্ট আবার এই মন্দিরের বিষয়ে রায় দেয়। সেখানে জানানো হয় ৬ নম্বর দরজাটা খোলা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্তটা স্থগিতই রাখা হলো। সেই কারণে ছ নম্বর দরজার পেছনের রহস্যটা রহস্যই রয়ে গেল, এই বিষয়ে কৌতূহল আর নিরসন হলো না। এই দরজার পেছনে রহস্য আজও মানুষের কাছে অধরাই রয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.