ভূমিকা
আলোক মরিয়া vs জ্যোতি মরিয়া, এই দম্পতির চর্চা পুরো দেশে কেন হচ্ছে?
এই ঘটনাটি এমন একটি ঘটনা যা দুজনের জীবনের সাথে জড়িত, যারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে এই ঘটনাতে জড়িত
স্বামী আর স্ত্রী কিছুদিন হল সারাদেশে আলোচিত। স্বামী আলোক মরিয়া আর স্ত্রী জ্যোতি মরিয়া, এরা দুজনেই আজকাল খবরের শিরোনামে থাকে। পুরো ঘটনাটি কি? কেন এবং কিভাবে স্বামী-স্ত্রীর জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত অশান্তি বাড়ির বাইরে গোটা দেশের কাছে চর্চার বিষয় হয়ে উঠলো।
আলোক এবং জ্যোতি মরিয়ার বিবাহ এবং সংসারের শুরু
বেনারসের চিরই নামের একটি গ্রামে অত্যন্ত সাধারণ পরিবারে জ্যোতির জন্ম হয়। জ্যোতির বাবার একটি ছোট দোকান ছিল। জ্যোতিরা হল তিনজন ভাইবোন, দুই বোন এবং এক ভাই। ছোট থেকেই জ্যোতি পড়াশুনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিল। কিন্তু জ্যোতির বয়স কুড়ি পার হতেই তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করে। তারপর প্রয়োগরাজ বা পুরনো এলাহাবাদের আলোক মরিয়ার সাথে জ্যোতির বিয়ে ঠিক হয়।
২০১০ সালে, আজ থেকে ১3 বছর আগে আলোক মরিয়ার সাথে জ্যোতি মরিয়ার বিয়ে হয়। ওই সময় আলোক মরিয়া পঞ্চায়েতি রাজ বিভাগে সাফাই কর্মী ছিল। শুরু থেকেই জ্যোতির স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে একটা ভালো চাকরি জয়েন করবে। বিয়ের সময় জ্যোতি বিএড এর পড়াশোনা করছিল। জ্যোতি তার মনের ইচ্ছের কথা আলোককে জানায় আর এই স্বপ্ন পূরণ করতে জ্যোতিকে আলোক সব রকম ভাবে সাপোর্ট দেয়। বিএড এর পড়াশোনা শেষ করার পরে জ্যোতি প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিং ও নেয়। এই সময় জ্যোতিকে সাহায্য করার জন্য আলোক সংসারের কাজকর্ম সামলানো থেকে শুরু করে ঋণ নিয়ে জ্যোতির কোচিংয়ের খরচ পর্যন্ত দিয়ে সাপোর্ট করেছে। তাছাড়াও জ্যোতির কোচিং এর খরচ চালানোর জন্য আলোকের বাবা অর্থাৎ জ্যোতির শ্বশুরও আর্থিক সহায়তা করে।
আলোক আর জ্যোতির জীবনে কিভাবে অশান্তি সূত্রপাত হলো?
২০১৫ সালে জ্যোতি সফলভাবে পিসিএস পরীক্ষায় পাশ করে। ২০১৫ সালে পিসিএস পরীক্ষায় জ্যোতির রেঙ্ক ছিল পুরো ইউপিতে ১৬, আর ইউপির শুধু মহিলাদের মধ্যে ৩। এরকম একটি পরীক্ষায় টপ টুয়েন্টিতে নিজের নাম নিয়ে আসাটা একটা ভীষণই বড় ব্যাপার ছিল। যে সময় জ্যোতি পিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেই সময় জ্যোতি প্রেগন্যান্ট ছিল আর ওই বছরে জ্যোতি যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। যমজ কন্যা সন্তান আর পরীক্ষায় সফলতা এই সবকিছু নিয়ে আলোকের সাথে জ্যোতির পুরো পরিবার ভীষণ খুশি ছিল। ২০১৬ সালের সমস্ত রকম ট্রেনিং এর শেষে জ্যোতি সাব ডিভিশনাল ম্যানেজার অথবা এস ডি এম হিসেবে পোস্টেড হয়। তারপরে দুজনে সুখে সংসার করছিল। কিন্তু ২০২০ সালে এমন কিছু ঘটে, যে কারণে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কর্মসূত্রে জ্যোতি বারেলিতে থাকে আর আলো প্রয়াগরাজে নিজের বাড়িতে থাকে। মনিশ দুবে আর জ্যোতি কে আপত্তিকর অবস্থায় জ্যোতির বাংলোতে দেখেছে বলে আলোকের দাবি। এছাড়াও তার অভিযোগ এইচ ডি এম হওয়ার পরে আলোকের সাথে জ্যোতির স্ট্যাটাস প্রবলেম শুরু হয়ে যায়।
এস ডি এম জ্যোতির সাথে মনিশ দুবের সম্পর্কের শুরু কিভাবে?
২০২০ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জ্যোতি মরিয়ার সাথে মনিশ দুবে নামক একজন ব্যক্তির সাথে আলাপ হয় আর সেখান থেকেই অবৈধ সম্পর্কের শুরু হয় মনীষ দূবে গাজিয়াবাদে হোমগার্ড কমান্ডেন্ট পদে কর্মরত আছে। এখন অভিযোগ হল জ্যোতি মরিয়া মনীষ দূবের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের স্বামী আলোক মরিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। এই ঘটনার প্রকাশ এস ডিএম জ্যোতি মরিয়ার স্বামী আলোক মরিয়া কিছু whatsapp চ্যাট, ভিডিও ক্লিপ, অডিও মিডিয়ার সামনে নিয়ে এসে করে। এই ঘটনায় জ্যোতি এবং আলোক দু তরফেই এফ আই আর করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশ হোম গার্ড ডিপার্টমেন্টেও আলোক মরিয়া অভিযোগ জানিয়েছে মনীশ দুবের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও আলোক মরিয়া একটি ডাইরি মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসে এবং দাবি করে এটা জ্যোতির ডাইরি। যেখানে মাসে মাসে প্রায় 6 লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার হিসেব জ্যোতি লিখে রেখেছে। এই অভিযোগের সত্যতা এখনো যাচাই হয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোক আর জ্যোতি কে নিয়ে ভীষণ চর্চা।
মিডিয়ার সামনে পুরো ঘটনা প্রকাশ করার পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ এই ব্যাপারে পক্ষে এবং বিপক্ষে খোলাখুলি মতামত জানাচ্ছে। বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করা হচ্ছে আলোক আর জ্যোতিকে নিয়ে? আলোক মরিয়া যদি জানত জ্যোতি নিজের বিভাগের কাজ করার জন্য ঘুষ নেওয়ার মতো দণ্ডনীয় অপরাধ করে তাহলে সেটার বিরুদ্ধে সে আগে কেন অভিযোগ করেনি? আবার যে স্বামী পড়াশুনোর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা থেকে সাংসারিক কাজে কর্মে সহায়তা করে স্ত্রীকে এস ডি এম হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ সাহায্য করলো সেই স্বামী হঠাৎ করেই এত খারাপ কি করে হয়ে গেল?
কিন্তু মিডিয়ার সামনে শুধুমাত্র আলোক মরিয়া আসছিল, জ্যোতি মরিয়া ঘটনার শুরুতে মিডিয়ার সামনে নিজের সমর্থনে কিছু বলার জন্য আসেনি। জ্যোতি মিডিয়ার সামনে শুধু এটুকুই বলেছে এই কেসটা কোর্টে বিচারাধীন আর এটা নিয়ে যা বলার উনি কোর্টেই বলবে, মিডিয়া কে নয়।
জ্যোতি মরিয়ার বাবা মিডিয়ার সামনে একটা বিয়ের কার্ড নিয়ে আসে, যেটা জ্যোতি আর আলোকের বিয়ের। সেই কার্ডে আলোক নিজেকে অফিসার পদে চাকুরীরত বলে এবং তার পরিবারের বাকি সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি পদে কর্মরত বলে উল্লেখ করেছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা ছিল। জ্যোতি যখন এই সত্যটা জানতে পারে তখনই তাদের মধ্যে ভীষণ অশান্তির শুরু হয়। এছাড়াও জ্যোতির বাবা জানিয়েছে এস ডি এম হওয়ার পরে আলোক জ্যোতির কাছে একটি বাড়ি আর ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছে। যদি আলোকের এই দাবি পূরণ না করায় আলোক মিডিয়ার সামনে জ্যোতির নামে মিথ্যে অভিযোগ করছে।
কর্মসূত্রে জ্যোতিকে দুই সন্তানের সাথে মাকে নিয়ে বাইরে থাকতে হতো আর আলোক প্রয়োগরাজে নিজের গ্রামের বাড়িতে থাকতো। বদলির চাকরি এমনিতেও জ্যোতি আর আলোককে আলাদা করে দিয়েছিল। তার ওপর দুজনের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশের জন্য সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে।
এস ডি এম জ্যোতির কি কি অভিযোগ আছে স্বামী আলোক এর বিরুদ্ধে ?
ঘটনা শুরুর দিকে এস ডি এম জ্যোতি চুপ থাকলেও পরে মিডিয়ার সামনে আসে আলোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। জ্যোতির তরফে বলা হচ্ছে প্রায় দশ মাস ধরে আলোক তার ফোন হ্যাক করে রেখেছিল। যে কারণে তার বিভাগের অনেক জরুরী নথি আলোকের কাছে আছে। এছাড়াও জ্যোতির ব্যক্তিগত অনেক ফটো আলোক রেখেছে। আলোক এই সব কিছু আবার জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করতে পারে, এই আশঙ্কা জ্যোতির তরফে প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাড়ি গাড়ি আর পঞ্চাশ লাখ টাকা আলোক জ্যোতির কাছে দাবি করেছে। জ্যোতির তরফেও আলোকের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে জ্যোতি যদি জানতো যে তার ফোন হ্যাক করা হয়েছে তাহলে সে কেন আগে অভিযোগ করেনি বা ফোনটা বদলে নেয়নি। জ্যোতির অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি আলোক এর কাছে কিভাবে গেল? কেন এই বিষয়ে জ্যোতি আগে সাবধান হয়নি? আর বলা হচ্ছে, পনের জন্য টাকা চাওয়ার যে অভিযোগ জ্যোতি করেছে আলোকের বিরুদ্ধে সেটা তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কারণ বিয়ে সাত বছর পরে এই আইন কার্যকারী নয়।
এস ডি এম জ্যোতি হোমগার্ড কমান্ডেন্ট মনীষ দুবের সাথে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছে। উনার বক্তব্য হল এই ব্যাপারে আমি কোন সাফাই দেব না। এটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত বিষয়। যদি দুজন মানুষ একসাথে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে চায় তাহলে সেটা খারাপ কেন হবে। উনি মনীষের বিষয়ে আরো জানিয়েছে যে আর্য সমাজের মন্দিরে মনীষের একটা বিয়ে ছিল যেটার খুব তাড়াতাড়ি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
এস ডি এম জ্যোতির মতে বারবার মনিশ দুবের নাম নিয়ে আলোক মরিয়া নিজেকে অত্যাচারীতের মত দেখাচ্ছে অথচ আলোক জ্যোতির ওপর মানসিক নির্যাতন করছে টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ির জন্য। আলো বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা চেয়েছে এই সমস্ত অপ্রীতিকর ঘটনা ভুলে আপস করে জ্যোতির সাথে থাকার জন্য, এটাও জ্যোতির তরফে জানানো হয়েছে।
কিন্তু এস ডি এম জ্যোতি এই আপোস করার শর্ত না মেনে ডিভোর্স নেওয়ার জন্য কেস ফাইল করেছে। যার প্রথম তারিখ ১১ই জুলাই ছিল, সেদিন জ্যোতি কোর্টে উপস্থিত হয়নি। জ্যোতির উকিল এপ্লিকেশনের মাধ্যমে জানিয়েছে যে ছুটি না পাওয়ার কারণে জ্যোতি কোর্টে উপস্থিত হতে পারেনি। প্রয়াগরাজের ফ্যামিলি কোর্টে সেই কারণে শুনানি হতে পারেনি। ১৮ই আগস্ট পরবর্তী শুনানি তারিখ ঠিক হয়েছে।
অন্যদিকে আলোক আর জ্যোতি মরিয়া বিবাদে ভীষণ বিপদে পড়েছে মনিশ দুবে। এসডিএম জ্যোতি আর মনিশ দুবে দুজনে মিলে আলোক মরিয়াকে হত্যা চক্র্রান্ত করতে পারে বলে কিছুদিন আগে আলোক অভিযোগ হোমগার্ডের অফিসে করেছিল। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে প্রয়াগ রাজের ডিআইজি মনীষের বিরুদ্ধে তদন্তভার ডি জি হোমগার্ড কে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেও আলো আর জ্যোতির কেসে মনীশের নাম জড়ানোর জন্য আগেই তাকে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে মহুবা জেলাতে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়েছে। মোহবাতে গুলাবি গ্যাং মহিষ দুবের বিপদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে, তারা মনীষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং দাবি জানায় মনিশ কে ওখান থেকে সরাতে হবে। তারপর এই বিভাগীয় তদন্তে মনীশ দুবেকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে মনীশ দুবে আর্য সমাজ মন্দিরে দু’বছর আগে তনু পরাশার নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছে। তার সাথে বনিবনা না হওয়ার কারণে এই মুহূর্তে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে।
আলোক মরিয়া মিডিয়ার সামনে এই ঘটনা প্রকাশ করার সময় ভীষণ কান্নাকাটি করে আর সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভীষণভাবে ভাইরাল হয়। জনসাধারণের কাছে এই বিষয়টা একটা চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো ব্যাপারটাকে এইভাবে দেখানো হচ্ছে যে এই ঘটনা দুনিয়ার সমস্ত স্বামী যারা তাদের স্ত্রীকে জীবনে এগোনোর পথে সাহায্য করছে তাদের জন্য এটা একটা সাবধান বাণী। যদি কোন স্ত্রী কর্মসূত্রে বা পড়াশুনো উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোচ্ছে তার মানেই সে তার স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বা ভবিষ্যতে করবে। জ্যোতি আর আলোক মরিয়ার ঘটনা কে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এভাবেই ছড়ানো হচ্ছে।